ইসলাম স্বভাবজাত ধর্ম। স্বভাববিরুদ্ধ কোনো কিছুর কথা ইসলাম শিক্ষা দেয়নি। একটি ছোট শিশু এই স্বভাব নিয়ে মায়ের পেট থেকে জন্ম লাভ করে। সত্যকে গ্রহণ করা, মিথ্যাকে ঘৃণা করা তার ভেতরে প্রোথিত থাকে।আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সুতরাং তুমি নিজ চেহারাকে একনিষ্ঠভাবে এই দ্বিনের অভিমুখী রাখো। আল্লাহর সেই ফিতরাত অনুযায়ী চলো, যে ফিতরাতের ওপর তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টিতে কোনো পরিবর্তন সাধন সম্ভব নয়। এটাই সম্পূর্ণ সরল দ্বিন।কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না।’ (সুরা : রোম : ৩০)
অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক মানুষকে এমন যোগ্যতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, সে ইচ্ছা করলেই আপন সৃষ্টিকর্তা ও মালিককে চিনতে পারবে। নবী-রাসুলদের বাতানো পথ সহজেই অনুসরণ করতে পারবে। মানুষের মজ্জাগত এই যোগ্যতাকেই কোরআনে কারিমে ‘ফিতরাত’ শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে।
আর এই যে মজ্জাগত যোগ্যতা আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক মানুষকে দান করেছেন। এই যোগ্যতা সম্পূর্ণরূপে বিলোপ করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। মানুষ পরিবেশ-পরিস্থিতির প্রভাবে সাময়িকভাবে পথ হারিয়ে ফেলতে পারে। কিন্তু তাকে আল্লাহ তাআলা জন্মগত যে স্বভাব দিয়ে সৃষ্টি করেছেন তা শেষ হবে না। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, নবী (সা.) ইরশাদ করেন, প্রত্যেক নবজাতক ফিতরাতের ওপর জন্মগ্রহণ করে।
এরপর তার মাতা-পিতা তাকে ইহুদি বা খ্রিস্টান অথবা অগ্নি উপাসকরূপে রূপান্তরিত করে, যেমন চতুষ্পদ জন্তু একটি পূর্ণাঙ্গ বাচ্চা জন্ম দেয়। তোমরা কি তাকে (জন্মগত) কানকাটা দেখেছ? (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৩০২)
নখ ছোট রাখা
বড় বড় নখ রাখা চতুষ্পদ জন্তুর স্বভাব। এ জন্য যাদের নখ বড় থাকে তাদের ভেতরে সূক্ষ্মভাবে একটা হিংস্রতা ভাব চলে আসে। আর নখ যদি পরিষ্কার থাকে তখন নিজের কাছেও আরাম লাগে, স্বস্তিবোধ অনুভব হয়। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম আদেশ করেছেন, নখ কাটার জন্য। নখ বড় হলেই যেন নিজে থেকে কেটে নেয়। চিকিৎসকরাও অকপটে একথা স্বীকার করেন। এ জন্য তাঁরা নখ বড় রাখতে নিষেধ করেন। কেননা নখের নিচে লুকিয়ে থাকা নোংরা ও জীবাণু মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ।
শরীরের অবাঞ্ছিত লোম পরিষ্কার করা
মানুষের স্বভাব, তার সুগন্ধি ভালো লাগে, সে দুর্গন্ধকে ঘৃণা করে ও অপছন্দ করে। গোসল করলে স্বস্তিবোধ করে, আর গোসল না করলে অস্বস্তি বোধ করে। এগুলো মানুষের স্বভাবসিদ্ধ বিষয়। শরীরের অবাঞ্ছিত লোম পরিষ্কার করাও মানুষের স্বভাবসুলভ বিষয়। দীর্ঘদিন কেউ যদি শরীরের অবাঞ্ছিত লোম পরিষ্কার না করে, নাভির নিচের পশম কর্তন না করে, এর কারণে তার ভেতর খারাপ লাগা অনুভব হয়। আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, আমাদের জন্য গোঁফ ছাঁটা, নখ কাটা, বগলের পশম উপড়ে ফেলা এবং নাভির নিচের পশম কাটার সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে যে ৪০ দিনের বেশি যেন না রাখি। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৪৯২)
৪০ দিনের অধিক না রাখার অর্থ এই নয় যে এর সর্বোচ্চ সময় ৪০ দিন। ৪০ দিনের বেশি যেন না হয়। প্রিয় নবী (সা.) প্রত্যেক জুমার দিন নখ ও গোঁফ কাটতেন। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে উত্তম হলো প্রত্যেক সপ্তাহে এই কাজগুলো করা। তা সম্ভব না হলে অন্তত ১৫ দিন পর। আর ৪০ দিনের বেশি যেন কোনোভাবেই অতিবাহিত না হয়।
অন্তিম মুহূর্তেও সাহাবাদের অভ্যাস
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, বনু-হারিস ইবনে আমির ইবনে নওফল খুবাইব (রা.)-কে ক্রয় করেন। আর খুবাইব (রা.) হারিস ইবনে আমিরকে বদরের যুদ্ধে হত্যা করেন। এরপর (ঘটনাক্রমে) খুবাইব (রা.) তাদের হাতে বন্দী হন, তখন তারা তাঁকে হত্যা করার জন্য একত্র হয়। তখন খুবাইব (রা.) হারিসের কন্যার কাছে তাঁর লজ্জাস্থানের লোম পরিষ্কার করার জন্য একখানা ক্ষুর চান। সে তখন তাঁকে একখানা ক্ষুর প্রদান করে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৩০৯৮) Ref: kalerkantho