উৎসবপ্রেমী বাঙালির হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ইতিহাসের অন্যতম অনুষঙ্গ মেলা। বছরের বিভিন্ন সময়ে কোনো না কোনো উপলক্ষ এলেই গ্রাম-বাংলার মানুষ উৎসবে মেতে ওঠে। আয়োজন করে বিভিন্ন ধরনের মেলার। এসব আনন্দ আয়োজন ছোট-বড় সবাই সোৎসাহে উপভোগ করে। সব বয়সী এবং সব শ্রেণি-পেশার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে এই ধরনের ঐতিহ্যবাহী আয়োজনগুলো হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত। তেমনি পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে একাধিক মেলা, উৎসব এখন চলছে গ্রাম-গঞ্জে।
সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার গোয়াহরি বিলে সোমবার শুরু হয়ে চলছে ১৫ দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী বার্ষিক ‘পলো বাওয়া উৎসব।’ হবিগঞ্জে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ঐতিহ্যবাহী ‘পইলোর মাছমেলা’ এবং গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলায় সোমবার অনুষ্ঠিত হয় ‘মাছের মেলায় জামাই-শ্বশুরের প্রতিযোগিতা।’
সালাম মশরুর সিলেট অফিস থেকে জানান, নিজের হাতে মাছ ধরার আনন্দই আলাদা। ছোট-বড় সকল বয়সের মানুষের কাছে এই আনন্দের কোনো ভেদাভেদ নেই। হাওড়ে মাছ ধরার দিন-ক্ষণের অপেক্ষা চলে বছরজুড়ে। গ্রামে এটা পলো বাওয়া উৎসব নামে পরিচিত। প্রতি বছর পলো বাওয়া উৎসবের দিনকে সামনে রেখে এলাকায় চলে নানা আয়োজন। এ উপলক্ষে শ্বশুরবাড়ি থেকে স্বামী-সন্তান নিয়ে বাপের বাড়ি বেড়াতে আসেন মেয়েরা।
এলাকার প্রবাসী যারা তার দেশে আসার প্রস্তুতি নেন। তারা পলো বাওয়া উৎসবে যাতে যোগ দিতে পারেন, সে বিষয়টি মাথায় রাখা হয়। পলো বাওয়া উৎসবকে কেন্দ্র করে বিশ্বনাথ উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের গোয়াহরি গ্রামে গত কয়েকদিন ধরে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালন করা হয় বার্ষিক পলো বাওয়া উৎসব। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও গোয়াহরি গ্রামের বিলে সোমবার বার্ষিক পলো বাওয়া উৎসব শুরু হয়। আগামী ১৫ দিন পর্যন্ত চলবে ওই উৎসব।
গোয়াহরি গ্রামের পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে ওই ১৫ দিন বিলে মাছ ধরার ক্ষেত্রে নেই কোনো নিষেধাজ্ঞা। এ জন্য ওই ১৫ দিনের ভেতরে বিলে গ্রামের যে কেউ হাত দিয়ে বা টেলা জাল (হাতা জাল) দিয়ে মাছ ধরতে পারবেন। তবে গ্রামবাসীর ঐতিহ্য অনুযায়ী আগামী ১৫ দিন পর ২য় ধাপে এক সঙ্গে আবারও পলো বাওয়া উৎসবে যোগ দেবেন গ্রামবাসী। পূর্বপুরুষদের রেখে যাওয়া ঐতিহ্যকে যুগ যুগ ধরে আজও বুকে ধারণ করে রেখেছেন গোয়াহরি গ্রামের বর্তমান প্রজন্মের বাসিন্দারা।
তাই নিজেদের ঐতিহ্য অনুযায়ী প্রতি বছর মাঘ মাসের পহেলা তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে পালিত হয়ে আসছে বার্ষিক পলো বাওয়া উৎসব। এবারের পলো বাওয়া উৎসবে পলোর সঙ্গে সঙ্গে টেলা জাল (হাত জাল), উড়াল জাল, চিটকি জাল, কুচাসহ মাছ শিকারের বিভিন্ন রকমের সরঞ্জাম নিয়ে মাছ শিকারে অংশগ্রহণ করেন কয়েক শতাধিক শৌখিন শিকারিরা। তবে বিলে পানি চলাচলের ব্যবস্থা না থাকায় বিলের পানি কমে যাওয়াতে মাছ ধরা পড়েছে কম।
শিকারিদের হাতে শিকার হওয়া মাছের মধ্যে রয়েছে- বোয়াল, কাতলা, রুই, কার্প, শোল, গণিয়া, মিড়কাসহ বিভিন্ন প্রজাতির ছোট মাছ। পলো বাওয়া উৎসবে অংশ নিতে ও দেখতে সকাল থেকেই গোয়াহরি গ্রামবাসীর পাশাপাশি আশপাশের গ্রামের লোকজন বিলের পাড়ে এসে জমায়েত হতে থাকেন। পুরুষদের পাশাপাশি নারীরা আসেন বিলের পাড়ে। মাছ ধরার এ দৃশ্যটি উপভোগ করতে বিলের পাড়ে সকল বয়সের পুরুষ-মহিলা এবং দূর থেকে আসা আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব ভিড় করেন।
পইলের মাছমেলা ॥ মো. মামুন চৌধুরী হবিগঞ্জ থেকে জানান, সোমবার হবিগঞ্জে ঐতিহ্যবাহী পইলের মাছমেলা অনুষ্ঠিত হয়। হাওড় এলাকার দেশীয় মাছ দেখতে হলে এ মাছমেলায় যেতে হয়। তাই অনেকেই এ মেলায় অংশ নিয়ে থাকেন। কারণ এখানে বোয়াল, আইড়, পাবদা, রুই, কাতলা, চিতল, বাউস, টাকি, পুঁটি, মাগুরসহ শতাধিক প্রজাতির মাছ বিক্রেতারা নিয়ে আসেন। এসব দেখলে যে কারও মনে আনন্দ জাগবে। তাই দলে দলে লোকজন মেলায় সমবেত হতে দেখা যায়।
হবিগঞ্জ সদর উপজেলার পইল গ্রামের ঈদগাহের কাছে বসে দেশীয় মাছমেলা। মেলায় এ মাছগুলো হাওড়, বিল ও পুকুর থেকে সংগ্রহ করে বিক্রির জন্য নিয়ে আসা হয়। এ যেন এক প্রাণের উৎসব। এতে মিলনমেলায় পরিণত হয়। মেলায় হবিগঞ্জ ছাড়াও মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ এমনকি ঢাকা থেকেও লোকের আগমন হয়।
মেলায় আলাপকালে বিক্রেতা কাজল মিয়া বলেন, এবার বড় আকারের দুটি বোয়াল মাছ নিয়ে এসেছি। এগুলোর মূল্য হাঁকিয়েছি ৬০ হাজার টাকা। আব্দুল আলী জানান, হাওড় থেকে জীবিত বোয়াল ও আইড় মাছ এনেছি। বিক্রির জন্য বসে আছি। ক্রেতারা এসে দাম জেনে নিচ্ছেন। সাজল মিয়া বলেন, রুই মাছ নিয়ে এসে ৩৫ হাজার টাকা মূল্য চেয়েছি। সুজন মিয়া বললেন, জীবিত আইড় মাছ নিয়ে এসেছি বিক্রির জন্য। এমনভাবে শত শত বিক্রেতা মাছ নিয়ে আসেন এ মেলায়। মাছের মেলা উপলক্ষে কৃষিজাত পণ্য, শিশু-কিশোরদের খেলনা, দেশীয় ফার্নিচার, তৈজসপত্র, সবজি ও ফল, শীতকালীন পোশাক, মিষ্টান্নসহ সহস্রাধিক স্টল নিয়ে জমে ওঠে মেলা।
হবিগঞ্জ সদর উপজেলার পইল গ্রামে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন ও বাগ্মীনেতা বিপীন পালের জন্ম। আর তার সময়কাল অর্থাৎ ২০০ বছরের অধিক সময়ের পূর্বে পইল গ্রামে পৌষ সংক্রান্তিতে দেশীয় মাছের মেলার প্রচলন শুরু হয়। পৌষমেলার আয়োজন করে স্থানীয় পইল ইউনিয়ন পরিষদ। প্রতি বছরের মতো এবারও পইল গ্রামের ঈদগাহের পাশে বসে মাছের মেলা। এ মেলায় হবিগঞ্জের হাওড়, বিল ও পুকুরের দেশীয় নানা প্রজাতির কেমিক্যালমুক্ত মাছ ছাড়াও বাহ্মণবাড়িয়া, মৌলভীবাজার, সিলেট ও কিশোরগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা থেকে জেলেরা বড় বড় মাছ বিক্রি করতে আসেন।
পইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ মঈনুল হক আরিফ বলেন, যদিও সংক্রান্তির দিন মেলা বসে, কিন্তু মেলার পূর্ব ও পরের দিন মিলে মেলা গড়ায় তিনদিনে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। মেলায় লোকজন নির্বিঘেœ আসার সুযোগ করা হয়েছে। যুগ যুগ ধরে চলে আসা এ মেলাটি এলাকার সাধারণ মানুষের একটি প্রাণের উৎসব। আবার কবে আসবে এ মেলাটি- এ প্রত্যাশাই থাকে অনেকের।
জামাই-শ্বশুর প্রতিযোগিতা ॥ মোস্তাফিজুর রহমান টিটু গাজীপুর থেকে জানান, কালীগঞ্জ উপজেলার বিনিরাইল গ্রামে সোমবার অনুষ্ঠিত হলো ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা। আবার অনেকে এটিকে জামাইমেলাও বলে থাকেন। মেলার আশপাশের এলাকায় যারা বিয়ে করেছেন, সেসব জামাই ও তাদের শ্বশুর মূলত এখানকার ক্রেতা। শ্বশুরবাড়ি নিয়ে যেতে এবং জামাইকে আপ্যায়ন করতে বড় মাছ কেনার জন্য এ মেলায় আসেন তারা। তাই মেলায় বড় মাছ কেনার প্রতিযোগিতা হয় শ্বশুর-জামাইয়ের মধ্যে। জামাই-শ্বশুর ছাড়াও পছন্দের মাছ কিনতে অনেকে দূর-দূরান্ত থেকে আসেন এ মেলায়। এতে উৎসবমূখর হয়ে ওঠে মেলার পরিবেশ। সারাদিন বড় বড় মাছের দাম নিয়ে চলে ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁক-ডাক।
এবারের মেলার প্রধান আকর্ষণ ছিল ৭০ কেজি ওজনের বাঘাইড় মাছ। এই বাঘাইড় মাছকে ঘিরে ক্রেতাদের জটলা লেগে থাকে। বিক্রেতা মাছটির দাম হেঁকেছেন ১ লাখ ১০ হাজার টাকা। ক্রেতাদের মধ্যে স্থানীয় এক জামাই মাছটির দাম সর্বোচ্চ ৮৫ হাজার টাকা বলেন। কিন্তু বিক্রেতা আরও বেশি দাম পাওয়ার আশায় মাছটি ছাড়েননি। পরে চলে দরকষাকষি। যত না ক্রেতা তার চেয়ে অনেক বেশি উৎসুক জনতা ভিড় জমান মাছটি দেখার জন্য।
বিনিরাইলের মাছের মেলার আয়োজক কমিটির সভাপতি জানান, কালীগঞ্জ উপজেলার বক্তারপুর, জাঙ্গালিয়া, মোক্তারপুর ও জামালপুর ইউনিয়ন চারটির চার মোহনার বিনিরাইল গ্রামে এই মেলাটি প্রথম অনুষ্ঠিত হতো খুবই ক্ষুদ্র পরিসরে এটি অগ্রহায়ণের ধান কাটা শেষে পৌষ সংক্রান্তি ও নবান্ন উৎসবের আয়োজন করা হতো। প্রায় ২৫০ বছর যাবৎ পৌষ সংক্রান্তিতে মাঘ মাসের প্রথম দিনে এ মেলাটির আয়োজন হয়ে আসছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ মেলাটি একটি সর্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে। প্রতি বছর মাছমেলাকে ঘিরে দূর-দূরান্ত থেকে মাছ কিনতে আসা আগত মেয়ে জামাই ও উৎসুক দর্শনার্থীরা ভিড় জমান বিনিরাইলের মাছ মেলায়। উৎসবমুখর হয়ে ওঠে মেলার পরিবেশ।
মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জানান, ব্রিটিশ শাসনামল থেকে বিনিরাইলের মাছের মেলা এখন ঐতিহ্যে রূপ নিয়েছে। এ মেলা কালীগঞ্জের সবচেয়ে বড় মাছের মেলা হিসেবে স্বীকৃত। এলাকার জামাইরা বলেন, শ্বশুরবাড়িতে মাছ নিয়ে যাওয়া বলে কথা। তাই এলাকার সকল জামাইয়ের নজর বিনিরাইলের মাছের মেলার বড় মাছটার দিকেই। ফলে স্থানীয় বড় মাছ ব্যবসায়ীরা সপ্তাহখানেক ধরে বড় বড় মাছ সংগ্রহ করে থাকেন। সেই অনুযায়ী মাছের দামও হাঁকানো হয়।
তারা জানান, বিনিরাইল গ্রামের মাছের মেলাকে ঘিরে আশপাশের কয়েক জেলার মানুষের সমাগমে মেলায় সোমবার দিনভর চলে আনন্দ-উৎসব। মূলত এটা জামাইমেলা। কিন্তু সবাই এটাকে বলে মাছের মেলা। আর এই দিনটিকে ঘিরেই এখানে দিনব্যাপী চলে আনন্দ-উৎসব। এ দিনটির জন্য সারাটি বছর অপেক্ষায় থাকেন স্থানীয়রা। এক টিকিটে দুই ছবি! বলাটা খুব বেশি অযৌক্তিক হবে না, এই মেলায় আছে একের ভেতর দুই। এককথায় রথ দেখা আর কলা বেচা। কারণ এটা মাছের মেলা হলেও এখানে চলে এলাকার জামাইয়ের মাছসহ সবকিছু বড় কেনার প্রতিযোগিতা।
বিনিরাইল এবং এর আশপাশে গ্রামে যারা বিয়ে করেছেন, সে সমস্ত জামাই হচ্ছেন ওই মেলার মূল ক্রেতা ও দর্শনার্থী। তা ছাড়া এই মেলাকে ঘিরে এলাকার শ্বশুরদের মধ্যেও চলে এক নীরব প্রতিযোগিতা। আর এই প্রতিযোগিতাটি হচ্ছে কোন জামাই সবচেয়ে বড় মাছটি ক্রয় করে শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যেতে পারে। আবার শ্বশুররাও চান কোন শ্বশুর সবচেয়ে বড় মাছটি ক্রয় করে জামাই আপ্যায়ন করতে পারে। বিনিরাইলের মাছের মেলা যেন জামাই-শ্বশুরের বড় মাছ কেনার প্রতিযোগিতার মাঠ।
মেলার আয়োজক ও স্থানীয়রা জানান, গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন তো এসেছেনই। এর বাইরে থেকেও অনেকে এসেছেন উপজেলার সর্ববৃহৎ এই মাছের মেলায়। গাজীপুর, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ থেকে অনেক মানুষ কেবল এই মেলা উপলক্ষেই কালীগঞ্জে এসেছেন। প্রতি বছর পৌষ সংক্রান্তিতে অনুষ্ঠিত হয় এ মেলা।
এবারের মেলায় প্রায় তিন শতাধিক মাছ ব্যবসায়ী বাহারি মাছের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। মেলায় মাছ ছাড়াও আসবাবপত্র, খেলনা, মিষ্টি ইত্যাদির পসরাও বসেছে। মাছের মেলায় সামদ্রিক চিতল, বাঘাইড়, আইড়, বোয়াল, কালবাউশ, পাবদা, গুলসা, গলদা চিংড়ি, বাইম, কাঁইকলা, রূপচাঁদা মাছের পাশাপাশি স্থান পেয়েছে নানা রকমের দেশী মাছও।
বিনিরাইলের মাছের মেলা নিয়ে কথা হয় মেলাসংলগ্ন জামালপুর ইউনিয়নের কাপাইস গ্রামের জামাই মো. হোসেন আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, শ^শুরবাড়িতে মাছ নিয়ে যাওয়া বলে কথা। তাই এলাকার সকল জামাইদের নজর বিনিরাইলের মাছের মেলার বড় মাছটার দিকেই। স্থানীয় বড় মাছ ব্যবসায়ীরা সপ্তাহখানেক ধরে বড় বড় মাছ সংগ্রহ করে থাকেন। সেই অনুযায়ী মাছের দামও হাঁকানো হয়। তিনি জানান, এবার সাড়ে ১৭ হাজার টাকার চিতল, বোয়াল, আইড়সহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ কিনেছেন শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
তিনি আরও জানান, শুরুতে এ মেলা শুধুমাত্র হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য হলেও বর্তমানে এটা সকল ধর্মের মানুষের কাছে ঐতিহ্যর উৎসবে পরিণত হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী এ মেলা সম্পর্কে স্থানীয় জামালপুর ইউপি চেয়ারম্যান জানান, মাছের মেলাটি এ অঞ্চলের ঐতিহ্যের ধারক। মেলায় বেচাকেনা যতই হোক, এ মেলা আমাদের ঐতিহ্য আর কৃষ্টি-কালচারকে বহন করছে এটাই সবচেয়ে বড় কথা। তাই এখানে কোনো প্রকার দাঙ্গা-হাঙ্গামা নেই। ব্রিটিশ শাসনামল থেকে বিনিরাইলের মাছের মেলা এখন ঐতিহ্যে রূপ নিয়েছে। এ মেলা কালীগঞ্জের সবচেয়ে বড় মাছের মেলা হিসেবে স্বীকৃত। ঐতিহ্যবাহী এই মেলায় প্রায় পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকার মাছ ক্রয়-বিক্রয় হয়।
কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলা থেকে মেলায় আসা মাছ ব্যবসায়ী নয়ন কুমার দাস জানান, তিনি প্রায় ২০ বছর ধরে এই মেলায় দোকান করেন। বিনিরাইলের পাশেই চুপাইর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বসে তিন দিনব্যাপী মাছের এ মেলা। ইতিহাস ঐতিহ্যের কারণে বিনিরাইলে কেনার চেয়ে দেখতে আসা মানুষের ভিড় এখন বেশি। তা ছাড়া স্থানীয় মানুষের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক স্থাপন হওয়াতে প্রতি বছর এ মেলায় যোগ দেন। এখানে বেচা-কেনাকে মুখ্য মনে করেন না বলে জানান তিনি।
এবার মেলায় প্রচুর দেশি রুই, কাতল, বোয়াল, আইড়, বাঘাইড়, চিতল, কালবাউশ ও রিটা মাছের সমাগম হয়েছে। এ ছাড়া কার্প জাতীয় নানা মাছের আমদানি হয়েছে। এক কেজি থেকে শুরু করে বিশ কেজি পর্যন্ত এসব মাছের দাম হাঁকা হচ্ছে ৪০০ টাকা থেকে শুরু করে ৬৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। বিক্রিও হচ্ছে প্রচুর। সামর্থ অনুযায়ী ক্রেতারা এসব মাছ কিনছেন।
বিনিরাইলের মাছের মেলা নিয়ে কথা হয় কলাপাটুয়া গ্রামের মতিউর রহমানের সঙ্গে। তিনি জানান, এবার সাড়ে ১৫ হাজার টাকার চিতল, বোয়াল, আইড়সহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ কিনেছেন বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য।