বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইলের শাড়ির জিআই (ভৌগোলিক নির্দেশক) নিজেদের বলে দাবি করেছে ভারত। তবে পণ্যটি বাংলাদেশের বলে ঘোষণা দেবে শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠান প্যাটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি)।
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইল শাড়িকে সম্প্রতি নিজেদের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ভারত। এমন দাবি করে দেশটির সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্টও দেওয়া হয়। যদিও এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার মুখে ওই পোস্ট সরিয়ে নেয় তারা।
বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হলে হলে নড়েচড়ে বসেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। গতকাল সোমবার রাজধানীর মতিঝিলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে জিআই পণ্যের স্বীকৃতিসংক্রান্ত এক জরুরি সভা হয়।
সভায় এ সময় শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব টাঙ্গাইলের শাড়ির জিআই নিবন্ধনের জন্য সব প্রক্রিয়া দ্রুত অনুসরণ করে আবেদন করার নির্দেশ দেন। সভায় ডিপিডিটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক অনলাইনে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।
সভায় জাকিয়া সুলতানা বলেন, ‘আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়িকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি ও নিবন্ধন দেওয়া হবে। টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি ছাড়াও মধুপুরের আনারস, নরসিংদীর লটকন, সাগরকলা, ভোলার মহিষের কাঁচা দুধের দই ইত্যাদিসহ জিআই পণ্যের স্বীকৃতির জন্য যেসব আবেদন অনিষ্পন্ন আছে তা দ্রুত সম্পাদন করতে হবে। এ বিষয়ে কোনো গাফিলতি গ্রহণযোগ্য নয়।’
শিল্পসচিব বলেন, ‘এ পর্যন্ত দেশের ২১টি পণ্যকে জিআই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। দেশের ৬৪টি জেলা থেকে এক বা একাধিক পণ্য বা বস্তু খুঁজে বের করে আবেদন করার জন্য জেলা প্রশাসকদের অনুরোধ করা হয়েছে। জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির পর এগুলোকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ব্র্যান্ডিংয়ের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
সভায় টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. কায়ছারুল ইসলাম বলেন, ‘টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধনের আবেদন যথাযথভাবে ডকুমেন্টেশন করে দু-এক দিনের মধ্যে জমা দেওয়া হবে। এরই মধ্যে আবেদন ফি দেওয়ার জন্য পে-অর্ডার করা হয়েছে।’
টাঙ্গাইল শাড়ির প্যাটেন্ট পেতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে: নানক
বাংলাদেশের টাঙ্গাইল শাড়ির প্যাটেন্ট (ভৌগলিক নির্দেশক) পেতে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক। আজ রবিবার দুপুরে মতিঝিলের পাট অধিদপ্তর পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন মন্ত্রী।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের টাঙ্গাইল শাড়ির প্যাটেন্ট পেতে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
মন্ত্রণালয় ও পাট অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, ‘কৃষকদের কাঁচা পাটের উপযুক্ত দাম নিশ্চিত করতে মধ্যসত্ত্বভোগীদের দৌরত্য বন্ধ করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন অনুযায়ী ১৯টা পণ্যে পাটের বস্তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক রয়েছে। এ সব পণ্যে কেউ যদি প্লাস্টিক ব্যবহার করে তাহলে আইনি ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হবে। সারাবছর দেশব্যাপী অভিযান চলমান থাকলেও বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করতে হবে।’
জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘পাট চাষ নিশ্চিতকরণে বীজ সরবরাহ সঠিক রাখা ও কৃষককে অন্যান্য উপকরণ সহায়তার কারণে দেশে পাটের উৎপাদন বেড়েছে। দেশে প্রয়োজনীয় কাঁচাপাট সরবরাহ নিশ্চিতকরণ এবং পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানির ধারা বেগবান করতে পাটের বাজারদর পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে পাটকলসমূহ নিরবচ্ছিন্নভাবে পাট সংগ্রহ করতে পারছে, যা রপ্তানি আয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।’
তিনি বলেন, ‘পাটখাতে সরকারের নানামুখী কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ফলে জাতীয় অর্থনীতিতে এ খাতটি অসামান্য অবদান রাখছে। বর্তমান টেকসই উন্নয়নের যুগে বিশ্বব্যাপী পরিবেশবান্ধব পাট ও পাটপণ্যের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে। পরিবেশবান্ধব পাটপণ্যের রপ্তানি বাড়াতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’
পাট অধিদপ্তর পরিদর্শনে মন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুর রউফ, পাট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. সেলিনা হোসেন ও মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।